
২০২৫ সালের মে মাসে রাজ্য সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করে—SSC মামলায় চাকরি হারানো গ্রুপ C এবং গ্রুপ D কর্মীদের জন্য মাসিক ভাতা চালু করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গ্রুপ C কর্মীদের ₹২৫,০০০ ও গ্রুপ D কর্মীদের ₹২০,০০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়।
তবে সেই সিদ্ধান্ত আইনি বাধার মুখে পড়ল। সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট এই ভাতা প্রদানের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে। বিচারপতি অমৃতা সিংহ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বা আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত রাজ্য এই ভাতা দিতে পারবে না।
⚖️ কলকাতা হাই কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ
এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিংহ প্রশ্ন তোলেন:
“২৫ হাজার ও ২০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভিত্তি কী ছিল? কোনও মূল্যায়ন বা রিপোর্ট ছাড়াই কীভাবে রাজ্য সরকার এই আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করল?”
রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, রাজ্যের হাতে বিচারাধীন কর্মীদের সহায়তা করা মানবিক দিক থেকে জরুরি ছিল। তবে মামলাকারীদের আইনজীবীরা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যাদের চাকরি বাতিল করেছে, তাদের কোনও অর্থ সাহায্য দেওয়া আইনবিরুদ্ধ।
হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে—
-
রাজ্যকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে
-
মামলাকারীদের পক্ষ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পাল্টা হলফনামা দাখিল করতে হবে
📚 চাকরি বাতিলের প্রেক্ষাপট
২০১৬ সালে নেওয়া SSC প্যানেলকে অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬,০০০ কর্মী—যাঁদের মধ্যে গ্রুপ C ও D কর্মীরাও রয়েছেন—চাকরি হারান। আদালতের রায়ে বলা হয়, অস্বচ্ছ ও দুর্নীতিপূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিযুক্তদের চাকরি বৈধ নয়।
চাকরি হারানোর পর অনেক কর্মী আর্থিক অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করেন। তাই রাজ্য সরকার সহানুভূতিশীল মনোভাব নিয়ে ভাতা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এখন প্রশ্নের মুখে।
🧭 রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ রাজ্য সরকারের কাছে দ্বিমুখী চাপ তৈরি করেছে—
-
একদিকে, ভবিষ্যতের বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে শাসক দল মানবিক মুখ তুলে ধরতে চাইছে
-
অন্যদিকে, আদালতের এই নির্দেশ প্রশাসনের উপর আইনি ও নৈতিক দায়বদ্ধতা তৈরি করেছে
শাসকদলের একাংশ ইতিমধ্যেই বলছেন, “আমরা চাই সাহায্য করতে, কিন্তু আদালতের বাধা রয়েছে।” এই বক্তব্য নির্বাচনী ময়দানে এক কৌশলগত রাজনৈতিক অস্ত্র হতে পারে।
🧾 টাকার অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন
বিচারপতির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—এই ভাতার পরিমাণ এত বেশি কেন? রাজ্য সরকার কোনও কমিশন বা বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়াই কিভাবে এই অঙ্ক নির্ধারণ করল?
“এটা কি সমগ্র নিয়োগ বাতিল হওয়া কর্মীদের আর্থিক দায়ভার সরকার তুলে নিল? এমন হলে আদালতের সিদ্ধান্ত কোথায় দাঁড়ায়?” — প্রশ্ন তুলেছেন মামলাকারীদের আইনজীবী।
❓ প্রায়শই জিজ্ঞাস্য (FAQs)
🔹 হাই কোর্টের রায়ের পরে কি ভাতা সম্পূর্ণ বন্ধ?
👉 আপাতত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকার এই ভাতা দিতে পারবে না। পরবর্তী শুনানিতে স্থায়ী সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
🔹 এই মামলার মূল অভিযোগ কী?
👉 ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধী এবং অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের আর্থিক সুবিধা দেওয়া বেআইনি।
🔹 রাজ্য সরকার কেন ভাতা চালু করেছিল?
👉 মানবিক কারণে—চাকরি হারানো কর্মীরা আর্থিক দুর্দশায় ভুগছেন বলে দাবি করে রাজ্য।
🔹 মামলার পরবর্তী শুনানি কবে?
👉 রাজ্যের হলফনামা জমা পড়ার ৪ সপ্তাহ পরে পরবর্তী শুনানি হতে পারে। আপাতত আদালত ভাতা স্থগিত রেখেছে।
Leave a Reply